Sunday, April 27, 2025

বাস্তব জীবনের গল্প।

                         “স্বপ্নের শহর নিউইয়র্ক”

                                 " আয়েশা সিদ্দীকা "


২৬ ডিসেম্বর ২০২১। ঠান্ডা শীতের এক সকালে রোকন পা রাখেন নিউইয়র্ক শহরে।আলো ঝলমলে স্বপ্নের শহর।  এখানেই শুরু হয়েছে রোকনের নতুন জীবনের গল্প,  চারপাশে অপরিচিত পরিবেশ, অচেনা মুখ — কিন্তু বুকের ভেতর ছিল একগুচ্ছ স্বপ্ন। এক নতুন জীবনের সূচনা।

রোকন বাসা নেন জ্যাকসন হাইটসে  — নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রের মতো একটি বাংলা ঘ্রাণমাখা এলাকা। রাস্তায় হাঁটলেই মিষ্টির দোকান, বইয়ের দোকান আর প্রিয় বাংলা ভাষা। এখানে যেন প্রবাসেও বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়।

নতুন দেশে কাজের শুরুটা সহজ ছিল না। বহু পরিশ্রমের পর রোকন একটি ক্যান্ডি শপে কাজ পান। দোকানের প্রতিটি দিন মানে নতুন অভিজ্ঞতা — নতুন মানুষ, নতুন গল্প। হাসিমুখে কাজ করে রোকন নিজের স্বপ্নকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন।

“জীবনের একটু সুখের জন্য  রোকনের এই প্রবাস জীবন,” 

 রোকন মনটাতে ভাবেন। প্রবাসে এসে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে, কিন্তু সেই হারানোর পরও তিনি জানেন, এই কঠিন পথে একদিন সুখের আলো আসবেই।

প্রথম দিকে, যখন তিনি নিউইয়র্ক এসেছিলেন, তার মনে হয়েছে, শহরের কোলাহল আর মানুষের ব্যস্ততা তাকে একেবারেই একা করে দিয়েছে। কিন্তু আজ, প্রতিটি দিন যেভাবে কাটছে, সেভাবে রোকন বুঝতে পারছেন যে সুখ একদিন আসবেই, যতই সংগ্রাম করতে হয়। সুখ শুধু সোনালি দিন, আকাশের নীচে শান্তি নয়,— সুখ মানে হচ্ছে পরিবারের কাছে ফিরে আসা, জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ করা।

রোকন জানেন, এই প্রবাস জীবন কষ্টের হলেও, তার মেয়েকে একদিন বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন। সেই দিনের জন্যই তার সংগ্রাম, তার পরিশ্রম, তার ভালোবাসা। এই প্রবাস জীবনটাই তাকে শেখাচ্ছে সত্যিকারের সুখের মূল্য।

রোকনের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা তার মেয়ে আয়েশা। প্রতিটি পরিশ্রমের পেছনে একটাই ছবি — মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরা। প্রতিদিনের ক্লান্তি শেষে আকাশের তারা দেখার সময় রোকন মনে মনে বলেন,“আয়েশা, মামনি, আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি। খুব শিগগিরই তোমাকে আমার বুকে জড়িয়ে রাখবো।”

নিউইয়র্কে জীবন মানে কেবল বিলাসিতা নয়, অদম্য পরিশ্রম। অধিকাংশ অভিবাসী সকালে বাসা থেকে বের হন, রাত গভীর করে তবেই ফেরেন। ট্যাক্সি চালানো, দোকানে কাজ করা, অফিস, কন্সট্রাকশন — সবারই নিজস্ব সংগ্রাম আছে। সপ্তাহান্তে, কিছুটা সময় পাওয়া গেলে সবাই বন্ধুদের সাথে দেখা করে, পার্কে ঘুরে, বা ঘরে বসে একটু আরাম করে।

নিউইয়র্কে হাঁটা শেখা মানে দ্রুত হাঁটা শেখা। এখানে সবাই যেন নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছে। তবে এই শহরই শিখিয়েছে, যদি কেউ পরিশ্রম করে, সে তার স্বপ্নকে ছুঁতে পারে।

শীতের সময় সারা শহর আলোয় ঝলমল করে — ক্রিসমাস মার্কেট, আইস স্কেটিং, বড় বড় ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। গ্রীষ্মে সেন্ট্রাল পার্কে কনসার্ট, ফুড ফেস্টিভ্যাল হয়। আর স্বাধীনতা দিবসে (৪ জুলাই) আকাশজুড়ে আতশবাজির ঝলক দেখে মন ভরে যায়।

নিউইয়র্ক মানেই স্বপ্নের শহর, জীবনের শহর। যেখানে কষ্ট আছে, কিন্তু আছে অগণিত সম্ভাবনাও।  যেখানে হারানোর ভয় আছে, কিন্তু নিজের জায়গা গড়ার সাহসও আছে।


শেষ কথা:

রোকন এখনো প্রতিদিন কাজ করেন, স্বপ্ন দেখেন। নিউইয়র্কের প্রতিটি ভোর তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় — একদিন সে তার মেয়েকে কোলে তুলে নেবে, বলবে,

“তুমি আমার জীবন, মামনি। আমি তোমার জন্য সব করতে পারি।।

                                             ⸻

No comments:

Post a Comment

বাস্তব জীবনের গল্প।

                         “স্বপ্নের শহর নিউইয়র্ক”                                  " আয়েশা সিদ্দীকা " ২৬ ডিসেম্বর ২০২১। ঠান্ডা শ...